ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পুষ্টিকর খাবার খেলে এবং নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করলে এই রোগগুলি এড়ানো সম্ভব। কিন্তু সময়ের অভাবে অনেকেই এত নিয়মকানুন মেনে চলতে পারেন না।
আমেরিকায় একটি গণনা করে দেখা গিয়েছে, ১০ জন মানুষের মধ্যে চার জনই ‘ওবেসিটি’তে (স্থূলতাজনিত সমস্যা) ভোগেন। প্রতি বছর এই রোগের চিকিৎসায় ১৭৩ বিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রা অনুযায়ী, ১ হাজার ৪৩৩ কোটি ২২ হাজার ৫০০ টাকা) খরচ হয়।
ব্রিটেনেও এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, চার জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে এক জন এই রোগে ভুগছেন। বছরপ্রতি ব্রিটেনে ৬.৫ বিলিয়ন ইউরো (ভারতীয় মুদ্রা অনুযায়ী, ৫২ হাজার ৪৬৮ কোটি ১৭ লক্ষ ৬৩ হাজার ১২৫ টাকা) খরচ হয়। শুধু আমেরিকা এবং ব্রিটেনেই নয়, সারা বিশ্বে স্থূলতাজনিত সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির বিজ্ঞানী ম্যানোলিস কেলিস জানান, মানবদেহের কোষের মধ্যে উপস্থিত অণু-পরমাণু স্তরে যে সমস্ত প্রক্রিয়া অনবরত চলতে থাকে, তার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।
ফ্যাটজাতীয় খাবার খাওয়ার পর এবং শরীরচর্চার ফলে মানবদেহে কী কী পরিবর্তন হয়, তা-ও লক্ষ করা দরকার বলে জানান ম্যানোলিস।
সান দিয়েগোর সক ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল স্টাডিজের বিজ্ঞানীরা ২০০৮ সালে একটি ওষুধের উপর পরীক্ষানিরীক্ষা করা শুরু করেন।
এই ওষুধের মধ্যে কমপাউন্ড ৫১৬ নামে এমন একটি পদার্থ থাকে, যা খেলে শরীরে এমন পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, শরীরচর্চা করেও শরীরে সেই একই বদল লক্ষ করা যায়। শরীরচর্চার পরিপূরক ধরা হয় বলে ওই ট্যাবলেটকে ‘এক্সারসাইজ পিল’ও বলা হয়ে থাকে।
গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেন, মানুষের শরীরে মেসেনকাইমা কলায় এক ধরনের স্টেম কোষ থাকে, যার মধ্যে ফ্যাট জমা হতে থাকে।
শরীরচর্চা করলে এই কোষে এমন পরিবর্তন দেখা দেয় যে, ওই স্টেম কোষে ফ্যাট জমার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে থাকে।
প্রাথমিক স্তরে বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখেন। কয়েকটি ইঁদুরকে বেশ কিছু দিন ফ্যাটজাতীয় খাবার খেতে দেওয়া হয়।
তার পর সেই ইঁদুরগুলিকে দুই দলে ভাগ করে দেওয়া হয়। এক দলের ইঁদুরগুলিকে ট্রেডমিলে দৌড় করানো হয় এবং অন্য দলের ইঁদুরগুলিকে নিজেদের মতো ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে, দুই দলের ইঁদুরের মধ্যে তুলনা করে দেখা যায়, যে ইঁদুরগুলি ট্রেডমিলে দৌড়েছে, তাদের শরীরের স্টেম কোষে বদল দেখা দিয়েছে। কিন্তু অন্য দলের ইঁদুরগুলির স্টেম কোষে অনবরত ফ্যাট জমা হয়েছে।
এই ওষুধ প্রয়োগের ফলে স্টেম কোষে ফ্যাট জমার ক্ষমতা কমে যায়। প্রাথমিক স্তরে পরীক্ষা সফল হওয়ার পর মানবদেহে এর অন্য রকম প্রভাব পড়বে কি না, তা জানতে রক্তকোষের উপর পরীক্ষা করবেন বলে সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কেলিস জানিয়েছেন, এই ওষুধ যদি মানবদেহেও সফল ভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে, তবে তা চিকিৎসাবিজ্ঞানে আমূল পরিবর্তন আনবে। যাঁরা সময়ের অভাবে শরীরচর্চা করতে পারেন না তাঁদের জন্য এই ওষুধ খুব উপযোগী।
– আনন্দবাজার
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।